সোমবার, ১৩ ফেব্রুয়ারী, ২০১২

ভালবাসা দিবস | কিছু কথা

পশ্চিমা বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে এখন বাংলাদেশেও ১৪ই ফেব্রুয়ারী "ভ্যালেন্টাইনস ডে বা ভালবাসা দিবস" পালন করা হচ্ছে। তথাকথিত প্রেম পিয়াসী তরুণ তরুণীরা নানা ধরনের অশ্লীলতা বেহায়াপনা ও নোংরামির মাধ্যমে দিবসটি পালন করে থাকে।

ভ্যালেন্টাইনস ডে বা ভালবাসা দিবসের ইতিহাস নিয়ে ইতিহাসবিদদের মাঝে নানা বিতর্ক রয়েছে। তবে যে দুটি মত বেশী গ্রহণযোগ্য তা হল-

১) সেন্ট ভ্যালেন্টাইন একজন রোমান পাদ্রীর নাম। এই পাদ্রী চিকিৎসকও ছিলেন। রোমের সম্রাট দ্বিতীয় কাডিয়াসের আদেশে ভ্যালেন্টাইনকে মৃত্যুদন্ড দেয়া হয়। তিনি যখন জেলে বন্দি ছিলেন তখন ছোট ছোট ছেলে মেয়েরা কাগজে ভালবাসার কথা লিখে জানালা দিয়ে ছুড়ে মারত। তিনি জেলে বন্দি থাকা অবস্থায় একজন অন্ধ মেয়ের চিকিৎসা করে দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে দেন। ফলে মেয়েটির সাথে তার যোগাযোগ ঘটে ও তার প্রতি ভালবাসা হয়। এই পাদ্রী তার মৃত্যুর পূর্বে মেয়েটিকে লেখা একটি চিঠিতে লিখে যান Form your valentine.
এই সেন্ট ভ্যালেন্টাইন এর নামানুসারে পোপ প্রথম জুলিয়াস ৪৯৬ খৃষ্টাব্দে ১৪ই ফেব্রুয়ারীকে সেন্ট ভ্যালেইন্টানস ডে ঘোষণা করে।

২) ১৪১৫ সালে তাজিন কোর্টের যুদ্ধে ইংরেজদের কাছে ফরাসী বাহিনী পরাজিত হয় এবং ফরাসী প্রিন্স ও কবি শাল ইংরেজদের হাতে বন্দি হন। ইংরেজদের জেলে দীর্ঘ ২৫ বছর বন্দি ছিলেন প্রিন্স শাল। বন্দি থাকা অবস্থায় সেখানে তিনি দেখতে পেলেন প্রতি বছর ১৪ই ফেব্রুয়ারী কিছু তরুণ তরুণী একত্রিত হয়ে আনন্দ ফুর্তি করত এবং লটারীর মাধ্যমে পরবর্তী এক বছরের জন্য সঙ্গী নিবার্চন করত। বিষয়টি প্রিন্স শালের খুব পছন্দ হয়। তাই তিনি বন্দি থেতে মুক্ত হয়ে নিজ দেশে এসে ১৪ই ফেব্রুয়ারীকে আনুষ্ঠানিকতার মাধ্যমে পালন করার উদ্যোগ নেন। এই থেকে অনেক ফরাসীর মতে ভালবাসা দিবসের সূচনা হয়।
সূচনালগ্ন থেকেই এই দিবসটি ভালবাসার আসল চেতনা থেকে দূরে সরে গিয়ে নানা ধরনের অশ্লীলতা আর নোংরামির মাধ্যমে পালন হতে থাকে। এই দিন ভালবাসায় মনের ছোঁয়া পাওয়ার চেয়ে দেহের ছোঁয়া পেতেই মরিয়া হয়ে উঠে তরুণ তরুণীরা। ধীরে ধীরে এই দিবসটিতে বেহায়াপনা বাড়তেই থাকে। তাই ফ্রান্স সরকার ১৭৭৬ ইং সালে দিবসটির উদযাপন বন্ধ ঘোষণা করে। ১৭ শতকে ইংল্যান্ডে ও নিষিদ্ধ ঘোষিত হয় দিবসটি। সময়ের পরিক্রমায় ধীরে ধীরে জার্মানী, ইটালী, হাঙ্গেরী, অষ্ট্রিয়া, থেকেও বিলুপ্ত হয়ে যায়। চালু থাকে আমেরিকা আর ব্রিটেনে আর ধীরে ধীরে প্রসার লাভ করতে থাকে মুসলিম দেশগুলোতে।
এই দিবসটি বাংলাদেশে পালিত হয় নব্বই এর দশকের শেষের দিকে। প্রথমে শহরগুলোতে সীমাবদ্ধ থাকলে ও এখন এর প্রসার ঘটেছে গ্রামে গঞ্জে পাড়া মহল্লায়। এই দিবসটিতে স্কুল, কলেজ, পার্ক ও বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে তরুণ-তরুণী, কিশোর-কিশোরীরা প্রেম বিনিময়ের নামে অবাধ মেলামেশা আর যেসব কর্মকান্ড করে তা কোন সভ্য মানুষ সমর্থন করতে পারে না। আর গুলশান, বারিধারায় কি সব আজে বাজে ঘটনা ঘটে তা ১৫ই ফেব্রুয়ারির পত্রিকা ও টিভি নিউজ দেখলেই বুঝা যায়। এই দিবসটি যদি এভাবে পালন হতে থাকে তবে অদুর ভবিষ্যতে আমাদের আগামী প্রজন্মের চরিত্র কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে তা ভেবে দেখার সময় হয়েছে। এখন থেকেই এর একটি ব্যবস্থা হওয়া প্রয়োজন।

পরিশেষে বলবো, ভালবাসা মানবতার জন্য একটি সর্বজননী শব্দ। এর জন্য বিশেষ কোন দিবসের প্রয়োজন হয় না। ভালবাসা শুধু তরুণ তরুণী, আর কিশোর কিশোরীদের অবাধ মেলামেশার নাম নয়। আমাদের ভালবাসা হোক মানবতার জন্য, স্রষ্টা আর স্রষ্টার সকল সৃষ্টির জন্য।

0 মন্তব্য:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Share

Twitter Delicious Facebook Digg Stumbleupon Favorites