সোমবার, ১৩ ফেব্রুয়ারী, ২০১২

মাদকের সহজ লভ্যতায় শিক্ষিত তরুণ তরুণীরা এদিকে ঝুঁকে পড়ছে

মাদক হচ্ছে মরনঘাতি কতগুলো নেশা জাতীয় দ্রব্য, যা মানুষ একবার আসক্ত হলে এর করাল গ্রাস থেকে ফিরে আসতে চাইলেও সহজে ফিরে আসা যায় না। মাদক ধ্বংস করে দেয় ফুলের মত কত গুলো মানুষের জীবন। যারা এ মাদক সেবন করে তারা তাদের জীবনের প্রতি জুলুমই করেনা বরং সমাজের অভিশাপও বটে! যারা মাদক পাচার ও ব্যবসার সাথে জড়িত তারা শুধুই নিজেদের বিবেকের বিসর্জন নয় বরং গোটা জাতি কে ধ্বংসের  মুখে ঠেলে দিচ্ছে। মাদক ব্যবসায়ীরা গোটা জাতির  কাছে তাদের মস্তিষ্ককে পদদলিত করেছে।

বর্তমান সমাজে মাদকের নির্মমতার কাছে মাতৃস্নেহও তুচ্ছ। টাকা না দেওয়ায় সন্তানের হাতে খুন হচ্ছে গর্ভধারিনী মা, জন্মদাতা বাবা। বিবাহিত স্ত্রী আর আদরের সন্তানরাও এ থেকে বাদ যাবে কেন! মিডিয়াতে এসব চাঞ্চল্যকর হৃদয় বিদারক ঘটনা পড়েও যদি আমাদের টনক না নড়ে তাহলে বুঝতে হবে আমাদের বিবেক পুড়ে গেছে।
বর্তমানে বাংলাদেশে মাদকাসক্তের সংখ্যা ৭০ লাধিক। এদের মধ্যে অধিকাংশই শিতি তরুণ-তরুণী। দেখা যায় প্রথমদিকে বন্ধুদের পাল্লায় পড়ে ধুমপানে অভ্যস্ত হয়। একসময় ঝুঁকে পড়ে মাদক সেবনের দিকে। সিগারেট খাওয়া থেকেই যে মাদকাসক্ত হয় এতে সন্দেহের অবকাশ নেই। এক জরিপে দেখা গেছে, মাদকাসক্তদের প্রায় ৯৮ শতাংশ ধুমপায়ী থেকে তাদের নেশা শুরু করে। তরুণ ছাত্রদের অনেকে ধুমপানকে তারুণ্যের ফ্যাশন হিসেবে দাঁড় করাতে চায়। কিন্তু গাড়ির সাইলেন্সর বা ইটের ভাটার মত মানুষের মুখ দিয়ে ধোঁয়া বের করা কোন স্টাইল হতে পারেনা। এতে কোন স্মার্টনেসও প্রকাশ পায় না। কলেজ- বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীদের পাশাপাশি মাদক গ্রহণ করছে বেকার যুবক, রিকসা চালক, সিএনজি চালকসহ নিন্ম আয়ের মানুষ। রয়েছে বিত্তবান ও উর্দ্ধতন সরকারি- বেসরকারি কর্মকর্তা ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের উচ্চ পদস্থ বা পদস্থদের ছেলে মেয়ে। ফলে মাদকাসক্তরা নারী ধর্ষণ, নারী কেলেঙ্কারী ও যৌন হয়রানির মত ঘৃণ্য কাজে লিপ্ত হচ্ছে। কখনও এদের প্রভাব আর প্রতাপের কাছে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীও নির্বাক।
মাদকের মধ্যে বর্তমানে বহুল পরিচিত ইয়াবা। উর্ধ্বতন কর্মকর্তা থেকে শুরু করে নিম্মস্তরের দিনমজুর, কেহই বাদ যাচ্ছেনা ইয়াবার গ্রাস থেকে। যুক্তরাজ্যভিত্তিক ‘ড্রাগস ইনফরমেশন’ এর ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে- ইয়াবা হেরোইনের চেয়েও ভয়াবহ। চিকিৎসকদের মতে, ইয়াবা সেবনের পর যেকোন সময় মস্তিস্কের রক্তনালী ছিড়ে যেতে পারে। যার ফলে স্ট্রোক ও রক্তরণ হতে পারে। এছাড়াও হৃৎপিন্ডের গতি ও রক্তচাপ বাড়বে, দ্রুত শ্বাস-প্রশ্বাসের আগমন-নির্গমন হওয়ার কারণে ফুসফুস ধীরে ধীরে কার্যমতা হারিয়ে ফেলবে। আর এসব ধারাবাহিকতা চলতে থাকলে মৃত্যু অবধারিত।
অনেকে সিগারেট খেলে কি আর এমন হবে বলে ধুমপানের নেতিবাচক দিকটি এড়িয়ে যেতে চান। গবেষণায় দেখা গেছে, সিগারেটের নিকোটিনও একটি মাদকদ্রব্য, যা হেরোইন কিংবা কোকেনের মতই নেশাজাতীয় বস্তু। এসব বস্তু যেমন তরুণ-তরুণীদের নেশাগ্রস্থ করে তোলে তেমনি সিগারেটও তাদের নেশাগ্রস্থ করে তুলতে পারে। দু’দশক আগেও যেখানে বাংলাদেশের মানুষ হেরোইনের নাম জানতো না। সেখানে মাদকের সহজলভ্যতায় বাংলাদেশ বিশ্বের সর্বোচ্চ নেশাগ্রস্থ দেশের মধ্যে অন্যতম।
মাদকের অপব্যবহার তরুণদের মেধা ও মননকে শেষ করে দেয়, বিনষ্ট করে সুপ্ত প্রতিভা ও সুস্থ চিন্তা। মাদক গ্রহণের ফলে শরীরের স্নায়ুবিক ভারসাম্য ভেঙ্গে পড়ে। মাদকদ্রব্য সবচেয়ে বেশি তি সাধন করে মস্তিস্ক এবং কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের। মাদকাসক্ত ব্যক্তি যেমন সমাজের তির কারণ হয়ে থাকে তেমনি একটি পরিবারকে নিঃস্ব করে ফেলে। কোন মা-বাবাই চাইবেনা তাদের আদরের ছেলেটি মাদকাসক্ত হয়ে অকালে শেষ হয়ে যাক এবং পরিবারের জন্য নিয়ে আসুক দুঃসহ যন্ত্রনা। তাই একজন নীতিবান ব্যক্তি ও আদর্শবান মানুষ কখনো মাদক নিতে পারেনা।
মাদক সমস্যা শুধু বর্তমান নয় ভবিষ্যতেরও সমস্যা। কিছু কিছু সমস্যা বর্তমানে সমাধান করলেই হয় না। যথাযথভাবে পর্যবেণ না করলে প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে চলতে চলতে একটা সময় জাতিকে ধ্বংসের পথে নিয়ে যেতে পারে।
মাদক সমস্যা থেকে উত্তরণের জন্য ড্রাগ ট্রাফিকিং বন্ধ করতে হবে। ইয়াবাসহ অন্যান্য মাদকের চোরাই পথ সীমান্তবর্তী এলাকাসমূহ। র‌্যাবসহ অন্যান্য বাহিনীকে এসব চোরাই পথে আসা মাদক যেন না আসতে পারে তার ব্যবস্থা করতে হবে। যারা মাদক গ্রহণ করে তারা সমাজের বাহিরের কেহ নয়। তারা আমাদেরি কারো সন্তান, কারো আদরের ছোট-বড় ভাই-বোন, কারো স্বপ্ন, কারো ভালোবাসার মানুষ। আমার বিশ্বাস যারা মাদক সেবন করে তারা একটু ভালোবাসা পেলে ফিরে আসতে পারে আলোর পথে। আমাদের উচিত নিজ নিজ জায়গায় থেকে তাদেরকে এই অন্ধকারচ্ছ্ন্ন পথ থেকে ফিরানোর চেষ্টা করা।

0 মন্তব্য:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Share

Twitter Delicious Facebook Digg Stumbleupon Favorites