শনিবার, ২৬ অক্টোবর, ২০১৩

যা দেখে চলেছি- একঃ ...অতঃপর বিয়ে


ভালোবাসা। চারটি বর্ণের ছোট্ট শব্দ। কিন্তু মানুষ তার  বেশির ভাগ সময়, অর্থসহ সব বিলিয়ে দেয় এই ভালোবাসার পেছনে।  আর প্রেম ভালোবাসার একটা অংশ মাত্র।  প্রেম করে বিয়ে করে কয়জন সুখি হয়েছে  আমার জানা নেই।  তবে নিচের গল্পগুলোতে দেখা যায় অসুখি হবার সংখ্যাটাই বেশি।  এরপরও মানুষ কেন যে প্রেম করে বিয়ে করতে হয় আমি বুঝিনা।  আমি ব্যক্তিগত ভাবে মনে করি- যাকে সবচাইতে বেশি ভালোবাসে তাকে কখনো বিয়ে করতে নেই, কারণ প্রিয় মানুষের একটু অবহেলা অনেক কষ্টকর।  আবার তাকে কখনো ঘৃণা করতে হবে বা ভালোবাসাটা কমাতে হবে এটাও আমার কাছে ভালো লাগেনা।

একঃ
আমার এক পরিচিত বড় ভাই। তাদের মাঝে অনেকদিন ভালোবাসার সম্পর্ক থাকার পর এক সময় পারিবারিক ভাবে ঘটা করে বিয়ে হয়। বিয়ের কিছুদিন ভালোই কাটে তাদের। তাদের ঔরসে একটি সন্তানও পৃথিবীতে আসে।
কিন্তু সুখ কখনই দীর্ঘস্থায়ী হয় না। চিরাচরিত নিয়মেই সুখের পরে দুঃখ তার নিয়ম মতোই চলে আসে তাদের জীবনে। চলতে থাকে ভুল-বুঝাবুঝি, একের প্রতি অন্যের অনীহা। কখনো কখনো উভয়ের হাতাহাতিতেও চলে যায়। এইরকমও হচ্ছে- তুমিইতো আমাকে স্বপ্ন দেখাইছো, ভালোবাসছো। এখন আর আমাকে ভালো লাগেনা? আবার বড় ভাইটিও কম যায়না। বলে- তুমি সব জেনেইতো আমাকে বিয়ে করছো। আমি কি তোমার কাছে কোন কিছু লুকিয়েছি? আমিতো আমার সবই তোমাকে জানিয়েছি।  একদিন কোন এক ঠুনকো কারণে মেয়েটি বিষপ্রাণে আত্মহত্যার চেষ্টাও করে।  তাদের মাঝে দুরুত্ব বাড়ে আবার কমে। এভাবেই চলছে তাদের সাংসারিক জীবন।

দুইঃ
এই ঘটনার নায়িকার নাম দিলাম 'অপি' যে আমার পরিচিত। আর নায়কের নাম দিলাম 'অমি'। একটা সময় অপি অমিকে প্রচন্ড ভালোবাসতো। কিন্তু অমি তাকে ওভাবে কখনো ভালোবাসেনি। এজন্য অপিকে বার বার ফিরিয়ে দিয়েছে কেন জানিনা। একদিন খুব আয়োজন করে অন্য ছেলের সাথে অপির বিয়ে হয়ে যায়। কিন্তু অপির দাম্পত্য জীবনটা সুখের ছিলোনা। এখানে সমস্যা ছিল অপির বরের। বর আর তার ফ্যামিলির সব চাহিদা পূরণের পরও অপির বর ও তার শ্বশুর-শাশুড়ি-ননদ-দেবর তার উপর শারীরিক, মানসিক নির্যাতন চালাতে থাকে। মেয়ে আর সইতে পারছেনা দেখে অপির পরিবার প্রায় তিন বছর পর নিয়ে আসে। চলতে থাকে অপির একাকীত্ব জীবন। অপি কয়েকবার প্রাণ নাশের চেষ্টা চালায়।
এসময় ভালোবাসা নিয়ে এগিয়ে আসে অমি।  অমি অপিকে পাগলের মতো ভালোবাসতে থাকে।  অপির সব দুঃখ নিজের করে নিতে চায়।  নানা ভাবে অপিকে বুঝাতে থাকে সে অপিকে কতটা ভালোবাসে।  কিন্তু অপি তাকে পাত্তা দেয় না।  অন্যদিকে অমিও তাকে জীবন সাথী করে নেবার জন্য মরিয়া হয়ে উঠে।  শেষ পর্যন্ত আর একা থাকতে পারেনি অপি।  অমির প্রতি পুরনো ভালোবাসাটা আবার জেগে ওঠে তাদের মনে।  অনেকটা উভয় পরিবারের সদস্যদের ইচ্ছা-অনিচ্ছাতেই বিয়ে করে তারা।  শুরু হয় অপির দ্বিতীয় দাম্পত্য জীবন।  অনেকটা সুখেই  ছিলো তারা। কিন্তু কিছুদিন পর অমি অনেকটা যৌতুক দাবী করতে থাকে অপির কাছে।  এজন্য অপিকে শারীরিক, মানসিক কষ্টও দিতে ছাড়েনি।  অথচ মেয়েটি অনেকটা তার নিজের পছন্দে বিয়ে করার কারণে তার পরিবারকেও কিছু বলতে পারছেনা আবার অন্যদিকে অমির যন্ত্রণাও সহ্য হচ্ছেনা।  এরই মাঝে আবারো এসব যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে  দুবার প্রাণনাশের চেষ্টা চালিয়েছে কিন্তু প্রতিবারই কেউ না কেউ দেখে ফেলেছে।  এখনো তাদের  সম্পর্কটা এভাবেই চলছে। 

তিনঃ
আমাদের এক টিচার।  নাম দিলাম রবি। স্যারের উনির নাম দিলাম ববি।  আমাকে 'স্যার খুব আদর করতেন।  সেই সুবাদে তার জীবন কাহিনীও শোনার সুযোগ হয়েছে।
রবি স্যার আর ববির মাঝে প্রেমের সম্পর্ক ছিলো।  ছাত্র জীবনেই তিনারা বিয়ে বন্ধনে আবদ্ধ হন।  ববির বাবা প্রভাবশালী হবার সুবাদে রবি স্যারের নামে মামলাও ঠুকে দেয়।  কয়েকদিন জেলের ভাত খেতে হলেও শেষ পর্যন্ত মেয়ের জন্যই মামলাটি তুলে নিয়ে তাদের সম্পর্কটা মেনে নেন।  তবে মজার ব্যাপার হলো তাদের সম্পর্কটার জন্য দু'জনকেই অনেক কষ্ট করতে হয়েছে।  এখন তাদের দু'জন সন্তান রয়েছে।  দাম্পত্য জীবনেও  তারা সুখি।  তবে কি তাদের মাঝে ঝগড়া-ঝাটি হয় না? হয়। তবে তারা তা ম্যানেজ করে নিতে পারে একের প্রতি অন্যের অগাধ ভালোবাসার কারণে। 

চারঃ
এই গল্পটি আমার এক ছোট ভাইয়ার।  আমি তাকে বন্ধুর মত জানি।  তাদের ভালোবাসার গল্পটি সেই আমাকে বলেছে।  বলার সুবিধার্থে নাম দিচ্ছি- তপু, আর মেয়েটির নাম দিচ্ছি নিপু।  নিপু নানুর বাড়িতে থেকে পড়াশোনা করতো।  নিপুর নানুর বাড়ি ছিল তপুর বাড়ির পাশে।  দু'টি বাড়ির দুরত্ব খুব কাছাকাছি।  নিপু তার কাজিনদের নিয়ে বিকালে তপুর বাড়ির এদিকে ঘুরতে আসে।   এছাড়া  নিপুদের বাড়িতে তপুর ফ্রেন্ডরা থাকার সুবাদে  বাড়িতেও যাতায়াত ছিলো তপুর।   তপু বিভিন্ন ভাবে  নিপুকে তার ভালোবাসা বুঝাতে থাকে।  একসময় তাদের মাঝে  ভালোবাসার সম্পর্ক  গড়ে ওঠে।  
একদিন নিপু  তপুকে বিয়ের কথা বলে।  যদিও  তখনো তারা দু'জনেই স্টুডেন্ট।  নিপুর পীড়াপীড়িতে তপু বিয়েতে রাজী হয়।  তারা পাশের জেলার  একটা থানায় গিয়ে বিয়ে করে।  তাদের বয়স বিয়ের জন্য উপযুক্ত না হওয়াতে  কাজী তাদের বিয়ে পড়াতে অস্বীকৃতি জানায়।  ফলে তারা একটা ফন্দি আঁটে।  কাজীকে বলে- আসলে আমাদেরকে গ্রাম থেকে বের করে দিয়েছে।  এখন আমাদের একসাথেই থাকতে হবে।  এখন যদি আপনি  আমাদেরকে বৈধ ভাবে বসবাসের ব্যবস্থা না করে দেন তবে আমাদেরকে অবৈধ ভাবেই থাকতে হবে ইত্যাদি ইত্যাদি বলে অতিরিক্ত ফি দিয়ে বিয়ে করে ফিরে এসে যে ার বাড়িতে চলে যায়।  বিয়ের সব খরচাদি নিপুই বহন করে।
এক ঈদে নিপুরা তপুর জন্য জামাকাপড় পাঠায়।  এতে জানাজানি হয়ে যায় তপু বিয়ে করেছে।  একদিন তপুর নিষেধ    করার পরেও নিপু চলে আসে তপুর বাড়িতে।   বাড়িতে আসার পর থেকে তপু কিছু পরিবর্তন লক্ষ্য করে নিপুর মাঝে।  প্রায় খারাপ ব্যবহার করতে থাকে।  আমি বলবোনা তাদের মাঝে ভালোবাসার কমতি ছিল বা আছে।  কিন্তু একটা সময় এসে এমন হবে এটাই নিশ্চিত।  কারণ হিসেবে বলবো তারা যে বয়সে বিয়ে করছে সে বয়সটা ছিল তাদের আবেগের।  এখন তাদের বিয়েটা শেষ পর্যন্ত টিকে কিনা আল্লাহ ভালো জানেন।  তবে  আমি বলছিনা তাদের একের প্রতি অন্যের ভালোবাসাটা কম ছিল বা আছে।

তাই আমার মনে হয় কাউকে ভালোবাসলে তাকে বিয়ে করা ঠিক না। বিয়ে করলে একটা সময় এসে একের প্রতি অন্যের ভালোবাসাটা কমে যাওয়ার সম্ভাবনা প্রচুর।  আমি তার প্রতি কখনো ভালোবাসাটা কমাতে পারবোনা  অথবা কখনো ঘৃণাও করতে পারবোনাকিংবা সে কখনো আমাকে কম ভালোবাসুক অথবা একটু অবহেলা করুক  তাও সহ্য হবেনা তবে বিয়ে না করাটাই ভালো। অন্তত একের প্রতি অন্যের ভালোবাসাটা চিরস্থায়ী থাকবে। 

0 মন্তব্য:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Share

Twitter Delicious Facebook Digg Stumbleupon Favorites