বৃহস্পতিবার, ৪ অক্টোবর, ২০১৮

প্রিয় স্বাধীনতা

আমাদের এই দেশ, বাংলাদেশ একটি প্রাচীন জনপদ।
শস্য- শ্যামল, সুজলা- সুফলা এই বাংলাদেশের প্রতি সব সময়ই ছিলো বিদেশীদের চোখ।
এখানে ছিলো আগে গোলা ভরা ধান, গোয়াল ভরা গরু আর পুকুর ভরা মাছ।
মাছে-ভাতে বাঙালিরা ছিলো সুখে- শান্তিতে ও আনন্দে।
কখনো এ দেশটি শাসন করেছে সেনারা, কখনো পালেরা। এক সময় শাসন করেছে দিল্লির সুলতানগন।
শায়েস্তা খাঁর আমলে এখানে টাকায় আট মন চাল পাওয়া যেতো।
এখানকার মসলিন কাপড় বিদেশে রফতানি হতো। ইউরোপের সব বড় বড় দেশ কাপড় আমদানি করত এ দেশ থেকে। এভাবেই এক সময় এ দেশের ওপর চোখ পড়ে ব্রিটিশ বেনিয়াদের।
তারা ব্যবসা করার নাম দিয়ে এ দেশে কোম্পানী খুললো ইস্ট-ইন্ডিয়া কোম্পানী। তারপর এক সময় সুযোগ বুঝে এ দেশী চক্রান্তকারীদের সহায়তারয় বাংলা-বিহার-উড়িষ্যার নবান সিরাজ উদ্দৌলাহকে হত্যা করে দখল করে নিলো সবুজ বাংলাকে। ঘৃণ্য এসব ষড়যন্ত্রকারীর মধ্যে সিরাজেরই আত্মীয় মীর জাফর আলী খান- মীর জাফর অন্যতম। টানা প্রায় ২০০ বছর ইংরেজরা এ দেশ শাসন করলো। পরাধীনতার শিকলে আটকে থাকলাম আমরা। আস্তে আস্তে আনেআদলন হলো, সংগ্রাম হলো, লড়াই হলো।
এলো স্বাধীনতা‘স্বাধীনতা হীনতায় কে বাঁচিতে চায়?’ভারত জুড়ে আন্দোলন সংগ্রাম হলো। গান্ধীর নেতৃত্বে ভারতের স্বাধীনতার লড়াই শুরু হলো, আবার মুসলমানদের জন্য আলাদা ভূখণ্ডের দাবিতে শুরু হলো কায়েদে আযম মুহাম্মদ আলী জিন্নাহর নেতৃত্বে ‘পাকিস্তানের’ দাবি।অবশেষে ১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তান মিলে ‘পাকিস্তান’ রাষ্ট্রের স্বাধীনতা এলো। ভারত স্বাধীন হলো ১৫ আগস্ট। মনে হলো এবার মানুষ সুখি হবে, শান্তি পাবে, অধিকার ফিরে পাবে। পরাধীনতার নতুন রূপ ইংরেজ বেনিয়ারা বিদায় নিলো। পাকিস্তান স্বাধীন হলো, কিন্তু ভাগ্যের পরিবর্তন হলো না বাংলাদেশের মানুষের। বাংলাদেশ তখন ছিলো পাকিস্তানের পূর্ব অংশ- পূর্ব পাকিস্তান। এ অঞ্চলে মানুষ ছিলো সাড়ে চার কোটি। পশ্চিম পাকিস্তান ছিলো পাকিস্তানের রাজধানী। রাষ্ট্র চলতো ওখানকার লোকদের ইচ্ছে মতো। ১৯৪৮ সালেই তারা চাইলো আমাদের ওপর উর্দু চাপিয়ে দিতে। বুকের রক্ত দিয়ে ৯৫২ সালে আমরা ভাষার অধিকার পেয়েছি। চাকরি- বাকরি সুযোগ সুবিধার ক্ষেত্রেও হলো অনুরূপ। সব বড় বড় পদ ওদের দখলে, এখানকার মানুষ ছিলো বঞ্চিত। কল-কারখানা, দালান-কোঠা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সব দিক থেকেই পূর্ব পাকিস্তান পিছিয়ে ছিল। ১৯৬৯ সালে গণঅভ্যুত্থান। ১৯৭০ সালে নির্বাচন। নির্বাচনে জিতল আওয়ামী লীগ কিন্তু পাকিস্তানের সামরিক জান্তা ক্ষমতা তাদের হাতে দেয়নি। অবশেষে শুরু হলো স্বাধীনতার লড়াই, মুক্তিযুদ্ধ। মুক্তিযুদ্ধের ৯ মাস ২৫ মার্চের কালো রাতে রাজারবাগ পুলিশ লাইনে নিরীহ নিরপরাধ বাংলাভাষী পুলিশ-বিডিআর সদস্যদের ওপর রাতের আঁধারে হামলা করলো পাকিস্তানি সেনাবাহিনী। ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ ঘোষিত হলো ‘স্বাধীনতা’!- ‘যাঁর যা কিছু আছে তা নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ো”- এই আহবানে সাড়া দিয়ে বাংলার শহর-গ্রামে-গঞ্জে সর্বত্র সংগঠিত হতে লাগলেন মুক্তিযোদ্ধারা। জেনারেল এম এ জি ওসমানীর নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা সংগঠিত হলেন সর্বত্র। সাথে যোগ দিলেন মেজর জলিল, মেজর জিয়া, এ কে খোন্দকারসহ অন্যান্য সেক্টর কমান্ডারগণ। এ দেশের সাহসী সৈনিকেরা পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী থেকে পালিয়ে এলেন। দেশের জন্য লড়াই করতে তাদেরসহ নিরস্ত্র মানুষদের নিয়ে গড়ে উঠলো মুক্তিযোদ্ধার দল। বাংলাদেশের প্রায় এক কোটি মানুষ অত্যাচার ও নির্যাতনের শিকার হয়ে পালিয়ে গেলেন ভারতে। ভারতীয় শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নিলেন তারা। ভারত সরকারের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় মুক্তিযোদ্ধারা ট্রেনিং নিলেন, রসদ ও অস্ত্র নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়লেন সর্বাত্মক মুক্তিযুদ্ধে। এভাবে ৯ মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ হলো। অকুতোভয় মুক্তিসেনারা ভারতীয় সেনাবাহিনীর সহায়থায় মরণপণ লড়াই করে কোনঠাসা করে ফেলল পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ও তাদের দোসরদের। অবশেষে ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ সাল, এলো বিজয়ের সেই দিনটি। সারা বাংলাদেশে পত্ পত্ করে উড়তে লাগলো লাল-সবুজের পতাকা! বিজয় হলো মুক্তিযুদ্ধের। আমরা স্বাধীন হলাম, মুক্ত হলাম। বিশ্বের মানচিত্রে স্থান করে নিল ‘গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ’ নামক এক স্বাধীন ভূখন্ড। যা চেয়েছি তা পাইনি যা পেয়েছি তা চাইনি ১৯৭১ থেকে ২০১১। আমাদের স্বাধীনতার ৪০ বছর পার হয়ে গেলো। মানুষের আয়ুর নিরীখে ৪০ বছর কম সময় নয়। কিন্তু আজো আমরা স্বাধীনতার পূর্ণ স্বাদ পাইনি।১৯৭১ থেকে ১৯৭৫ পর্যন্ত আমরা পেয়েছি স্বাধীন পতাকা, স্বাধীন দেশ কিন্তু আমরা দেখেছি দুর্ভিক্ষসহ লাঞ্চনা, গঞ্জনা!১৯৭৫ এ দেখেছি রাতের আঁধারে দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের আহবায়ক বাংলাদেশের স্থপতি শেখ মুজিবুর রহমানের সপরিবারের করুণ হত্যাকাণ্ড। ১৯৮১ -তে দেখেছি দেশের অন্যতম সফল শাসক জিয়াউর রহমানের হত্যাকাণ্ড। ১৯৮২ থেকে ১৯৯১ পর্যন্ত দেখেছি আবার সামরিক শাসন, স্বৈরাচার। ১৯৯১ থেকে ২০১১ পর্যন্ত দেশে পর পর ৪টি নির্বাচিত সরকার এসেছে। কিন্তু এত কিছুর পরও কি আমরা সত্যিকারের স্বাধীন দেশ ও জাতি হিসেবে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পেরেছি? আমাদের সাথে যাদের তুলনা হতে পারতো সেই মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড আজ উন্নত বিশ্বের সদস্য হয়েছে আর আমরা এখনো রয়ে গেছি উন্নয়নশীল দেশ। বাংলাদেশের মানুষের মাথাপিছু আয় বাড়েনি ঠিকই কিন্তু এ দেশে জন্ম নিয়েছে শত শত কোটিপতি। সাধারণ মানুষের জীবন মান বাড়েনি কিন্তু গড়ে উঠেছে প্রাসাদসম আবাসিক এলাকাসমূহ। শিক্ষার হার বেড়েছে কিন্তু বাড়েনি শিক্ষার মান। দুর্নীতি খেয়ে ফেলেছে আমাদের জাতির বিবেক। দেশপ্রেম হয়ে গেছে সস্তা শ্লোগান। আর গোটা জাতিকে আমরা করে ফেলেছি শতধা বিভক্ত। ছোট্ট বন্ধুরা! স্বাধীনতার এই দিনে আজ তাই এসো নতুন শপথে বলীয়ান হই। ভালবাসি এই দেশ, মাটি ও মানুষকে। এক হই, ঐক্যবদ্ধ হই, একমুখী হই। গড়ে তুলি একটি সুন্দর বাংলাদেশ, একটি সুজলা বাংলাদেশ, একটি সুফলা বাংলাদেশ। একটি আধুনিক বাংলাদেশ হোক আমাদের সাধনার লক্ষ্য।

 

0 মন্তব্য:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Share

Twitter Delicious Facebook Digg Stumbleupon Favorites