বৃহস্পতিবার, ৪ অক্টোবর, ২০১৮

গ্রামবাংলার ঐতিহ্য ঢেঁকি এখন বিলুপ্ত প্রায়

সময়ের বিবর্তনে গ্রামবাংলার ঐতিহ্য ঢেঁকি এখন বিলুপ্তপ্রায়। এখন আর কোন বাড়িতেই শোনা যায় না ঢেঁকির ধুমধাম শব্দ। মাত্র ত্রিশ থেকে চল্লিশ বছর আগেও বাংলার প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই ঢেঁকি ছিল। নবান্নের আগেই মহিলারা ঢেঁকি মেরামত করে ঘর লেপেমুছে প্রস্তুত করে রাখত। বাবলা কাঠের ঢেঁকির কদর ছিল বেশি। অবস্থাসম্পন্ন গৃহস্থরা ঢেঁকি তৈরি করত শালকাঠ দিয়ে। বৈশাখ-অগ্রহায়ণ মাস আসার আগেই ঢেঁকি মেরামত করা হতো। নতুন ধানের চাল এবং আটা তৈরির ধুম পড়ে যেত গ্রামবাংলায়। এর পর প্রায় বছরই চলত ধান থেকে চাল তৈরির কাজ। বিভিন্ন গ্রামে মধ্যবিত্ত পরিবারের গৃহিণী ও বৌ-ঝিরা নিজস্ব ঢেঁকিতে ধান ভাঙিয়ে চাল করত। ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত পালাক্রমে চলত ধান ভাঙ্গার কাজ। গরিব পরিবারের মহিলারা বড় গৃহস্থের বাড়িতে ঢেঁকিতে ধান ভেঙে চাল করে দিয়ে বিনিময়ে পারিশ্রমিক হিসেবে পেত চাল অথবা টাকা। গরিব মহিলারা পাঁচ থেকে ছয়জনের দল তৈরি করে ধান ভাঙতো পালাক্রমে। ২/৩ জন ঢেঁকিতে পাড় দিত আর একজন ঘরের মধ্যে ধান চাল ওলট-পালট করে দিত। চলত পান খাওয়ার আড্ডা আর পরনিন্দা। আবার অনেক সময় সুরে সুরে গীত ও গজল গেয়ে এসব শ্রমজীবী মহিলারা কাজের মধ্যে আনন্দ পেত। চলত হাসি-ঠাট্টা, তামাশা। সত্তর দশকের শুরুতেই গ্রামবাংলায় ইঞ্জিনচালিত ধান ভাঙার কল আমদানি শুরু হয়। এরপর থেকেই ধীরে ধীরে ঢেঁকি শিল্প পর্যায়ক্রমে বিলুপ্ত হতে থাকে।

 

0 মন্তব্য:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Share

Twitter Delicious Facebook Digg Stumbleupon Favorites